Mailing List
Sign up for our mailing list to get latest updates and offers.
গুগল ড্রাইভে জায়গা নেই আর। কিছু ছবি/ভিডিও না মুছলে আর নতুন ছবি/ভিডিওর জায়গা হচ্ছেনা। তাই পুরণো এলবাম ঘাটাঘাটি করে যে সমস্ত ছবির ব্যাকআপ হার্ড ড্রাইভ বা ডেস্কটপে আছে, সেগুলো মুছে ফেলছিলাম। হঠাৎই চোখে পড়লে একটা রেস্টুরেন্টের ছবি। কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতে অবস্থিত হোটেল সী ক্রাউনের বিচ বিউ একটা রুমের বারান্দা থেকে তোলা ছবির রেস্টুরেন্টটার নাম ছিলো এঞ্জেল ড্রপ। তবে এখন আর সেটা নেই।
আজ থেকে অন্ত দশ বছর আগে আগেই অবৈধ স্থাপণা হিসেবে চিহ্ণিত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গুড়িয়ে দিয়েছে কলাতলী সৈকতের এই কয়েকটি রেঁস্তোরা। তার মধ্যে সবচেয়ে পুরণো ও সবচেয়ে প্রিয় রেস্টুরেন্ট ছিলো এঞ্জেল ড্রপ। কাঠের দিয়ে তৈরী এ রেস্টুরেন্টা ছিলো সমুদ্র সৈকত থেকে সামান্য দূরে। সৈকত থেকে ছোট্ট একটি ব্রিজ পার হয়ে যেতে হতো এঞ্জেল ড্রপে। জায়গাটা আমার এবং আমার মতো অনেকেরই তখন কক্সবাজারের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিলো।
কক্সবাজার গেলেই ছুটে যেতাম সেখানে। রেস্টুরেন্টের বারান্দায় কোন একটা কাঠের চেয়ারে বসে খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে থাকতাম। জোয়ার আসলে রেস্টুরেন্টটার নিচে চলে আসতো পানি। আর সন্ধ্যার সময় সূর্যাস্তটা এতো ভালো লাগতো সেখান থেকে। কোন কোন দিন জোয়ার খুব বেশি হলে বারান্দায় পানির ছিটে এসে পড়তো। মনে আছে একবার তিন নাম্বার সিগন্যালের দিন সেখানে গিয়েছিলাম। বারান্দায় টেকাই যায়নি জোয়ারের ধাক্কায়। পরে আরো এক ফ্লোর উপরে যেয়ে বসেছিলাম।
সবচেয়ে মজার ব্যপার ছিলো এ রেঁস্তোরায় লাইভ মিউজিকের ব্যবস্থা ছিলোনা। কিন্তু যতবারই গেছি কোন না কোন গানের দলকে পেয়ে যেতাম। দর্শকদের উৎসাহে সে গান চলতো গভীর রাত পর্যন্তও। সব কিছু মিলে এঞ্জেল ড্রপটা ছিলো কক্সবাজারে আমাদের জন্য আলাদা একটি আকর্ষণ। ২০১০ বা ২০১১ সালে শেষবারের মতো গিয়েছিলাম এ রেঁস্তোরায়। সব বন্ধুরা মিলে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম সামুদ্রিক কোরাল মাছ দিয়ে।
পরের বছর কক্সবাজার যেয়ে রীতিমতো ধাক্কা খেলাম, নেই এঞ্জেল ড্রপ। শুধু এঞ্জেল ড্রপই নয়, পাশের বাকি দুটো রেঁস্তোরাও উধাও হয়ে গেছে। অবৈধ স্থাপণা সরকার উঠিয়ে দিবে যুক্তিসঙ্গত কারণে, সেটা বোঝার মতো বয়স আমার হয়েছিলো। কিন্তু তবু সেই কক্সবাজার ট্রিপটা মনে হলো মাঠে মারা গেলো। লোকমুখে শুনেছি এ রেঁস্তোরা ভেঙ্গে দেবার পর মালিক সাজ্জাদ ভাইও দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
এখনো কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতে গেলে দুচোখ খুঁজে ফিরে সেই হারানো দিনগুলো। কলাতলী সৈকতও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হোটেল সী ক্রাউনের জৌলুসও নেই। তার ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে প্রাসাদসম সায়মন বিচ রিসোর্ট। অনেকবার থাকাও হয়েছে সায়মনে। সি ভিউ রুমের বারান্দায় আসলে আনমনে এখনো খুঁজে ফিরি এঞ্জেল ড্রপকে।